
পহেলা বৈশাখ উদযাপন ও মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন বন্ধ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ
আসন্ন পহেলা বৈশাখ উদযাপন ও মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন বন্ধ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ঢাকার থেকে প্রকাশিত দৈনিক বিশ্ববার্তা২৪ ডট কম পত্রিকার সম্পাদক মুহম্মদ আরিফুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী শেখ ওমর শরীফ আজ (সোমবার) রেজিস্টার্ড ডাকযোগে সংস্কৃতি সচিব, শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শক [আইজিপি]-কে লিগ্যাল নোটিশগুলো পাঠান।
নোটিশদাতা বলেন, গত ৪ এপ্রিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, আসন্ন পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সারাদেশেও সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি ইউনিয়নে র্যালি করা হবে। সব জেলায় কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব ব্যবস্থাপনায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হবে।
এই আয়োজনের প্রেক্ষিতে নোটিশে প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করে বলা হয়, পহেলা বৈশাখ উদযাপন হিন্দু ধর্ম ও শিখ ধর্মের একটি বিশেষ ধর্মীয় রীতি। যদিও বর্তমানে প্রচলিত বাংলা সন মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে চালু হয়েছে, তবে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণ আছে যে, সপ্তম শতাব্দীর হিন্দু রাজা শশাঙ্কের সময়েও বাংলা বর্ষপঞ্জি তথা বঙ্গাব্দ প্রচলিত ছিল। মোগল আমলে সম্রাট আকবরের নির্দেশে খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজি হিন্দুদের সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের সমন্বয়ে নতুন বাংলা সনের নিয়ম চালু করেন – যা “ফসলী সন” নামে পরিচিত ছিল। সেই ফসলী সনের প্রতিটি মাসের নামই হিন্দুদের প্রচলিত বর্ষপঞ্জি থেকে গৃহীত হয়। সম্রাট আকবর বা জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজি কেউই বাঙালি ছিলেন না, সুতরাং এই বাংলা বর্ষপঞ্জির সাথে বাঙালি জাতিসত্তা বা সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই।
নোটিশে বলা হয়, শোভাযাত্রা আয়োজনও একটি সুপরিচিত হিন্দু রীতি, কেননা হিন্দুদের পূজা শেষে মূর্তি বিসর্জনের যাত্রাকে শোভাযাত্রা বলা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তথাকথিত মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন শুরু হয় মাত্র ১৯৮৯ সালে। সুতরাং এই তথাকথিত মঙ্গল শোভাযাত্রার সাথেও বাঙালি জাতি বা সংস্কৃতির কোনো প্রাচীন বা ঐতিহ্যগত সম্পর্ক নেই, বরং এটি কেবলই হিন্দু সংস্কৃতির অনুকরণ মাত্র।
নোটিশদাতা বলেন, যেহেতু পহেলা বৈশাখ উদযাপন ও সেই উপলক্ষে শোভাযাত্রা আয়োজন হিন্দু ও অন্যান্য পৌত্তলিক ধর্মের রীতিনীতি, তাই মুসলিমদের জন্য এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া আদৌ বৈধ নয়। হুজুরে পাক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ করলো, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।” [ আবু দাউদ শরীফ, হাদিস শরীফ নং ৪০৩১]
নোটিশদাতা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিককে যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, “কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।” সংবিধানের ২ক অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্দেশনা দিয়ে মুসলিম শিক্ষার্থী ও জনগণকে ভিন্ন ধর্মের রীতিনীতিতে যোগদান করানো সংবিধানপরিপন্থী।
নোটিশদাতা দাবি জানিয়েছেন, নোটিশপ্রাপ্তির দুই কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলিম শিক্ষার্থী ও জনগণের অংশগ্রহণে পহেলা বৈশাখ উদযাপন ও মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। অন্যথায় নোটিশদাতা আইনের আশ্রয় নেবেন বলে নোটিশে জানিয়েছেন।
Post a Comment